ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে নেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। পদত্যাগের আগে শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় শিশু-কিশোর-শিক্ষার্থী-নারীসহ হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। রক্তক্ষয়ী একটা বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত জনতার এ বিজয়কে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন আন্দোলনকারীরা।
সফল গণঅভ্যুত্থানের পর এতে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের চাওয়া মেনে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই সরকার এমন একটা সময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায় যখন দীর্ঘ স্বৈরশাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়েছে। তারপরও তাদের হাত ধরেই রাষ্ট্র সংস্কারের স্বপ্ন বুনছে দেশের সাধারণ জনতা।
শুরু থেকে নানা বিষয়ে অশ্চিয়তা ও দোলাচলের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ ৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার দুই মাস পূর্ণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে অনেক বিষয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এতে করে সরকারের প্রতি অনেকের দারুণ প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক কিছুতে এখনো হাত লাগানোর সময় পায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। এতে অনেকের মনে হতাশা তৈরি হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর গত দুই মাসে প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদল করেছে সরকার, যা এখনও চলমান আছে। আর্থিকখাতসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে সংস্কার উদ্যোগ। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক। ব্যাংকখাত সংস্কারে সিদ্ধান্ত হয়েছে আলাদা কমিশন গঠনের। সেই সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার। এদিকে কর্মবিরতি ও হামলার ভয় কাটিয়ে আবারও মাঠে ফিরেছে পুলিশ।
দুই মাস সময়টা খুবই অল্প, কাউকে মূল্যায়নের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। তারপরও এই সময়ে এই সরকার কী করেছে না করেছে তার দিকে নজর রয়েছে সবার। নজর রাখছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও।
দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে এই সরকার মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের রেখে যাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করাই তাদের প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ন্যায়বান লোকদের দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার।
নানামুখী সংস্কার ও উদ্যোগে আশার আলো দেখাচ্ছেন ড. ইউনূস
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে নানা পদে বসানো হয়েছে নতুন কর্মকর্তাদের। দুর্নীতিবাজ অনেক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, অনেককে করা হয়েছে ওএসডি। পরিবর্তন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতও।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই এসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে সরকার বিভিন্ন সময় জানিয়েছে।
এদিকে, সরকার পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। আবার নিয়োগ দেওয়া হয় সেই জায়গাগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগ হয়। কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয় প্রথম এক মাসের মধ্যেই। একইসঙ্গে সমস্যা জর্জরিত ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। এছাড়া, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন নতুনভাবে ফের চালু করার বিষয়টি ছিল প্রশংসনীয়।
পুঁজিবাজারের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করতে গঠন করা হয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কালাকানুন (দেশবাসীদের অমঙ্গলকারী আইন) বাতিল করার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সইও করা হয়েছে।
বিচার বিভাগে আগের নিয়োগ বাতিল করে সারা দেশে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ২২৭ জন আইনজীবীকে নতুন নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ৬৬ আইনজীবীকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৬১ আইনজীবীকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দুর্নীতি, হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানান অভিযোগ থাকার পরও গত দেড় দশকে যাদের বিরুদ্ধে সেভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, আগের সরকারের সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই দুই মাসের মধ্যে মামলা হতে দেখা গেছে।
রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত ছয় কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ছয়টি কমিশন হলো- নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের এই অল্প সময়ে একটি বড় সুযোগ আসে যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিরল সুযোগ পেয়েছেন। নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, এ সফরে সেটি কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। চার দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান।
অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
এছাড়া, সাইডলাইনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের প্রেসিডেন্টসহ ৪০টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূস এ সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে যেসব বৈঠক করেছেন, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অন্যদিকে, এখনো জনগণের চোখে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা এখনো পুুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিভিন্ন স্থানে নতুন চাঁদাবাজ গোষ্ঠীর আবির্ভাবের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আতঙ্ক কাটিয়ে এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ। রদবদল শুরু হলেও প্রশাসনে পূর্ণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের। মাত্র তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
দীর্ঘদিনের জঞ্জাল, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা চাপিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণে দৃশ্যমান কিছু করার জন্য যদিও দুই মাস খুবই অল্প সময়। তবুও সাধারণ মানুষ বলছেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এই সরকারকে কিছু দৃঢ় ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। অসফল হওয়ার মানেই হচ্ছে এত শত মানুষের রক্ত ও ত্যাগে অর্জিত এ অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা, যা কারও কাম্য হতে পারে না। তাই দেশ, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এই সরকারকে সফল হওয়া জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সফল গণঅভ্যুত্থানের পর এতে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের চাওয়া মেনে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই সরকার এমন একটা সময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায় যখন দীর্ঘ স্বৈরশাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসপ্রায়, আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা একরকম ভেঙে পড়েছে। তারপরও তাদের হাত ধরেই রাষ্ট্র সংস্কারের স্বপ্ন বুনছে দেশের সাধারণ জনতা।
শুরু থেকে নানা বিষয়ে অশ্চিয়তা ও দোলাচলের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ ৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার দুই মাস পূর্ণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে অনেক বিষয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এতে করে সরকারের প্রতি অনেকের দারুণ প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক কিছুতে এখনো হাত লাগানোর সময় পায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। এতে অনেকের মনে হতাশা তৈরি হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর গত দুই মাসে প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদল করেছে সরকার, যা এখনও চলমান আছে। আর্থিকখাতসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে সংস্কার উদ্যোগ। স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক। ব্যাংকখাত সংস্কারে সিদ্ধান্ত হয়েছে আলাদা কমিশন গঠনের। সেই সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার। এদিকে কর্মবিরতি ও হামলার ভয় কাটিয়ে আবারও মাঠে ফিরেছে পুলিশ।
দুই মাস সময়টা খুবই অল্প, কাউকে মূল্যায়নের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। তারপরও এই সময়ে এই সরকার কী করেছে না করেছে তার দিকে নজর রয়েছে সবার। নজর রাখছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও।
দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে এই সরকার মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের রেখে যাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করাই তাদের প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ন্যায়বান লোকদের দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার।
নানামুখী সংস্কার ও উদ্যোগে আশার আলো দেখাচ্ছেন ড. ইউনূস
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে নানা পদে বসানো হয়েছে নতুন কর্মকর্তাদের। দুর্নীতিবাজ অনেক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, অনেককে করা হয়েছে ওএসডি। পরিবর্তন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতও।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই এসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে সরকার বিভিন্ন সময় জানিয়েছে।
এদিকে, সরকার পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। আবার নিয়োগ দেওয়া হয় সেই জায়গাগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগ হয়। কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয় প্রথম এক মাসের মধ্যেই। একইসঙ্গে সমস্যা জর্জরিত ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। এছাড়া, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন নতুনভাবে ফের চালু করার বিষয়টি ছিল প্রশংসনীয়।
পুঁজিবাজারের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করতে গঠন করা হয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কালাকানুন (দেশবাসীদের অমঙ্গলকারী আইন) বাতিল করার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সইও করা হয়েছে।
বিচার বিভাগে আগের নিয়োগ বাতিল করে সারা দেশে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ২২৭ জন আইনজীবীকে নতুন নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ৬৬ আইনজীবীকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৬১ আইনজীবীকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দুর্নীতি, হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানান অভিযোগ থাকার পরও গত দেড় দশকে যাদের বিরুদ্ধে সেভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, আগের সরকারের সেইসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই দুই মাসের মধ্যে মামলা হতে দেখা গেছে।
রাষ্ট্র সংস্কারে ঘোষিত ছয় কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ছয়টি কমিশন হলো- নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের এই অল্প সময়ে একটি বড় সুযোগ আসে যা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিরল সুযোগ পেয়েছেন। নানা কারণে প্রধান উপদেষ্টার এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সংকট ছিল, এ সফরে সেটি কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। চার দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ ১২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান।
অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
এছাড়া, সাইডলাইনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আইএমএফের প্রেসিডেন্টসহ ৪০টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন তিনি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূস এ সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে যেসব বৈঠক করেছেন, তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অন্যদিকে, এখনো জনগণের চোখে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা এখনো পুুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিভিন্ন স্থানে নতুন চাঁদাবাজ গোষ্ঠীর আবির্ভাবের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আতঙ্ক কাটিয়ে এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি পুলিশ। রদবদল শুরু হলেও প্রশাসনে পূর্ণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের। মাত্র তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
দীর্ঘদিনের জঞ্জাল, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা চাপিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণে দৃশ্যমান কিছু করার জন্য যদিও দুই মাস খুবই অল্প সময়। তবুও সাধারণ মানুষ বলছেন, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এই সরকারকে কিছু দৃঢ় ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। অসফল হওয়ার মানেই হচ্ছে এত শত মানুষের রক্ত ও ত্যাগে অর্জিত এ অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা, যা কারও কাম্য হতে পারে না। তাই দেশ, রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এই সরকারকে সফল হওয়া জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।