
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও ঘিরে তোলপাড়
গোপন দরকষাকষিতে জড়িত ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক ওয়াজউদ্দিন!
ঢাকা ওয়াসার একটি বড় বাজেটের প্রকল্পে ঘুষ এবং সাংবাদিক ‘ম্যানেজ’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প পরিচালক ওয়াজউদ্দিন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ওয়াজউদ্দিন সাংবাদিকদের হাতে নগদ টাকা দিতে উদ্যত হচ্ছেন এবং ‘বিষয়টা যেন বাইরে না যায়’ এমন অনুরোধ জানাচ্ছেন।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, এটা প্রমাণ করে দেয়, ওয়াসার অনেক প্রকল্পে ঘুষ, দুর্নীতি ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের একটি অশুভ চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অস্বচ্ছতা, অতিরিক্ত ব্যয় এবং নিম্নমানের কাজের বিষয়ে বহু সাংবাদিক অনুসন্ধানে নামলেও তাদের মুখ বন্ধ রাখতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
জানা যায় ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক (PD) ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বচ্ছতার অভাব, এবং প্রকল্পে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাসকিম এ. খানের বিশেষ অনুগ্রহে ওয়াজউদ্দিনকে (PD) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। ওয়াজউদ্দিন বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় তাসকিমের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন এবং SCADA বাস্তবায়নের নামে System Engineering Ltd. এবং Beximco Ltd.থেকে অবৈধভাবে লাভবান হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে যে, ওয়াজউদ্দিন বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে দেন এবং সেসব প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের লাভবান করেন। এর মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা এবং বাংলাদেশ সরকার বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়গুলি:
– চুক্তির মেয়াদ ১.৫ বছর আগে শেষ হয়েছে, তবে ওয়াজউদ্দিন বারবার সময় বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
– সফটওয়্যারের গুণগত মান চুক্তিতে নির্ধারিত নেই, যা প্রমাণ করে স্বচ্ছতার অভাব এবং অনিয়ম।
– অতিরিক্ত মূল্যে PLC এবং অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা হয়েছে।
– CCGP অনুমোদনের পর ঠিকাদারের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করা হয়েছে।
– কেন্দ্রীয় গুদামে পৌঁছানো মালামাল যথাযথ অনুমতি ছাড়াই ঠিকাদারের গুদামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা নিতে ওয়াজউদ্দিন এবং System Engineering-এর চেয়ারম্যান মি. জাফর একসাথে কাজ করছেন।
– ডিসেম্বর ২০২৩-এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে, তবুও ২-৩ বার সময় বাড়ানো হয়েছে, তবে লিকুইডেটেড ড্যামেজ (LD) আরোপ করা হয়নি।
– একই ধরনের অনিয়ম Beximco Ltd. এর ক্ষেত্রেও বিদ্যমান।
গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ:
প্রকল্পের এসব প্যাকেজের গোপন দর-কষাকষি এবং অনিয়মের মাধ্যমে ওয়াজউদ্দিন এবং তাসকিম এ. খানের সম্পর্কিত ঠিকাদাররা ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। এছাড়া, ADB-অর্থায়িত প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মূল কারণ ওয়াজউদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের দুর্নীতি।
এছাড়া, এর আগে একাধিক বার প্রকল্প পরিচালক (PD) মি. ওয়াজেদকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ জানানো হয়েছিল, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তাসকিম এ. খান, যিনি ওয়াজউদ্দিনের নিয়োগদাতা, তার পক্ষ থেকে ওয়াজউদ্দিনের এই দুর্নীতির কর্মকাণ্ডের পেছনে এক গুরুতর ভূমিকা রয়েছে। তাসকিম নিজেও এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় তার আমলে ঢাকা ওয়াসা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবিলম্বে ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং তার দুর্নীতির বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তার পদে বহাল থাকা ওয়াসা এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য আরও বেশি আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে সুবিধা পাওয়া ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
তাছাড়া ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী সাংবাদিক বলেন, “আমরা প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে তথ্য নিচ্ছিলাম, তখন আমাদের ব্যক্তিগতভাবে ডেকে নিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন প্রকল্প পরিচালক।”
ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত দাবি করেছে নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির যথাযথ ও স্বচ্ছ পরিচালনা নিশ্চিত করতে এই ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।