ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫ , ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং তার প্রতিষ্ঠান

মাসুদ আলমেরে ই লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের ৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ০৬:৫৭:৪২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৬-০৬-২০২৫ ০৬:৫৭:৪২ অপরাহ্ন
মাসুদ আলমেরে  ই লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের ৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ। সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠ যুব কাউন্সিলের সভাপতি মাসুদ আলম বাগিয়েছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্প। মাসুদ ফ্যাসিস্টের অংশ হিসেবে বেশ পরিচিত। কিন্তু পতিত সরকারের ৯ মাসে পার হলেও মাসুদের মতো দোসরদের দৌরাত্ম্য থামেনি। আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং তার প্রতিষ্ঠান ই- লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে দুদকে চলছে তদন্ত। একটি প্রভাবশালী মহল মাসুদকে কাজ পাইয়ে দিতে সর্বোচ্চ অনিয়ম করেছে বলেও উঠেছে অভিযোগ। সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের


* তদন্ত শুরু দুদকের
* আওয়ামী শাসনকালেই টেন্ডার সাজানো, তদন্তের মুখেও থামেনি মাসুদের উত্থান
* ১০ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২০২০ সালের প্রতিষ্ঠানের হাতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প
* প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে একাধিক বিদেশ সফর, স্বার্থের সংঘাতে প্রশ্ন

সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠ যুব কাউন্সিলের সভাপতি মাসুদ আলম বাগিয়েছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সার প্রশিক্ষণ প্রকল্প। মাসুদ ফ্যাসিস্টের অংশ হিসেবে বেশ পরিচিত। কিন্তু পতিত সরকারের ৯ মাসে পার হলেও মাসুদের মতো দোসরদের দৌরাত্ম্য থামেনি। আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং তার প্রতিষ্ঠান ই- লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে দুদকে চলছে তদন্ত। একটি প্রভাবশালী মহল মাসুদকে কাজ পাইয়ে দিতে সর্বোচ্চ অনিয়ম করেছে বলেও উঠেছে অভিযোগ। সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের


প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হামিদ খান
সময় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ২৯৭ কোটি টাকার ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রকল্পের দরপত্র সাজানো হয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাসুদ আলমের ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের জন্য। যার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ভুয়া সার্টিফিকেট এবং ডিজিটাল প্রতারণার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর জুলাই চেতনার সরকারের আমলেও সেই মাসুদের প্রতিষ্ঠানই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। অথচ ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের টেন্ডার যোগ্যতা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানিকে ১০ বছরের প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা থাকার শর্তে নির্বাচিত করা হয়েছে—যা টেন্ডার শর্তাবলির সরাসরি লঙ্ঘন। ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ‘ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড’র কর্ণধার মাসুদ আলমের ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের একযোগে বিদেশ সফরের তথ্য এসেছে আমাদের কাছে। এই দুজনের ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের একযোগে বিদেশ সফর স্বার্থের সংঘাত (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) তৈরি করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। অনুসন্ধানে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের সঙ্গে প্রভাবশালী আমলাতান্ত্রিক চক্রের তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দুই সাবেক সচিবের গভীর ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেসবাহ উদ্দিন। ২০২২ সালে সচিব থাকাকালে মেসবাহ উদ্দিন ৪৬.৭ কোটি টাকার একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্পের নকশা করেন। পরের বছর তার ঘনিষ্ঠ মাসুদ আলমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি কাজ পায়। অবসরের কয়েক মাসের মধ্যেই মেসবাহ নিজেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও শেয়ারহোল্ডার হন। ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ আমলা মেসবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অতীতে বিচারবিভাগীয় ক্যুর চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তিনি গত অক্টোবরে ‘জুলাই গণহত্যা সংক্রান্ত একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন।

 

মাসুদ আলমের আরেক ব্যবসায়িক অংশীদার সাবেক সচিব আখতার হোসেনের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার। তিনি মাসুদের অন্য কোম্পানি নগদহাট বাংলাদেশ লিমিটেডেরও শেয়ারহোল্ডার। কোম্পানি দুটি গঠিত হয় যথাক্রমে ২০২০ ও ২০২১ সালে। আরজেএসসির নথি অনুযায়ী, নগদহাটে মাহবুবা ছাড়াও যুক্ত ছিলেন আরেক সাবেক সচিব মো. নাসির উদ্দিন। আখতার হোসেন ২০২২ সালে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজি সমন্বয়ক হন। এ তথ্যগুলো একত্রে বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়—প্রকল্পটি প্রাপ্তির পেছনে ছিল ক্ষমতাধর আওয়ামী ঘনিষ্ঠ আমলাদের যোগসাজশ। এই স্বার্থান্বেষী চক্র, যারা সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক সুবিধা নিশ্চিত করেছে। এছাড়া ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, দরপত্রে ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে গ্রহণযোগ্য (রেসপনসিভ) হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড, বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন যোগ করে প্রথম হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড। প্রতিমন্ত্রী রাসেলের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠানকে আইটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প দেওয়া নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গত অক্টবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফলে সাময়িকভাবে প্রকল্প অনিশ্চিত হলেও পরে অজানা এক ক্ষমতার জোরে সেটি মাসুদের কোম্পানির অনুকূলে চূড়ান্ত হয়। অথচ, মাসুদ আলম ছিলেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগ (রবিউল-রানা) কমিটির সহসম্পাদক। গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের কর্মী। জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ নামক সোশ্যাল মিডিয়া পেজ (এমএসপিএম) সামরিক সচিব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিচালনা করেন এ মাসুদ। এসব কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩, শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২, জাতীয় যুব পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননা পান। তার বাবা আজাহার উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ছোট ভাই রাসেল আলম করতেন ছাত্রলীগ। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর টেলিভিশনে রাঙা সকাল নামে একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে মাসুদ বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার বাবা আজাহার উদ্দিন আওয়ামী লীগ করতেন বলে তখন তিনি পালিয়ে যান। ফলে প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনাও শেষ করতে পারিনি।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে। তাই এ কার্যাদেশ বাতিল করে প্রকল্পটি আবার টেন্ডারের আওতায় আনা উচিত। তবে তার আগে যাচাই করা জরুরি—এ প্রকল্পটি আদৌ দেশের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। অতীতে ‘ডিজিটালাইজেশন’র নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে স্বৈরাচারী সরকার। এখন সময় এসেছে খতিয়ে দেখার—এ প্রকল্পও সেই লুটপাটের ধারাবাহিকতার অংশ কিনা? প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আউটসোর্সিং ও বিভিন্ন আইটি ট্রেনিংয়ের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। লাখ লাখ তরুণকে এমন প্রশিক্ষণ দিয়েছে যার ফলাফল শূন্য। নতুন বাংলাদেশের নামে ফ্যাসিস্টের পুনর্বহাল হচ্ছে এবং যেভাবে জনগণের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে, তা আগের চেয়েও বেশি দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।’
এ বিষয়ে জানতে মাসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এক ঘন্টা পর বিস্তারিত জানাবেন বলে দুই দিন পার হয়ে গেলেও তিনি আর কোনো বক্তব্য দেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে মন্তব্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ