বাংলাদেশের ইতিহাসের তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিপ্লব–পরবর্তী পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় জোর দিতে চায়। এর পাশাপাশি বর্তমান আর্থিক সংকটকে বিবেচনায় নিয়ে চীনের দেওয়া ঋণের নানা শর্ত পুনর্মূল্যায়নও জরুরি।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এমন মন্তব্য করেছেন। ঢাকায় চীনের দূতাবাসের সহায়তায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ (এসআইআইএস–ডিইউ) এ আলোচনার আয়োজন করে।
সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ তার ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। ফলে বিপ্লব–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎকে আরও ব্যাপক পরিসর থেকে বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষ করে বিপ্লব–পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গতিপথ এবং অন্যান্য নানা উপাদান চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে হয়তো প্রভাবিত করতে পারে। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তনশীল বৈচিত্র্যময়।
ঢাকা–বেইজিং সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যা অন্তর্বর্তী সরকার অব্যাহত রাখতে চায় ইঙ্গিত দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রতিরক্ষা। বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী চীন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে চীন। ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে চীনের কাছ থেকে আরও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর বক্তৃতায় দুই দেশের বাণিজ্যে অসম পরিস্থিতি দূর করার স্বার্থে চীনের বাজারে বাংলাদেশের অশুল্ক বাধা অপসারণের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে চীনের দেওয়া ঋণের নানা রকম শর্ত পুনর্মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে চীনে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। চীনের সহায়তায় কিছু প্রকল্প চলমান আছে এবং আমরা আশা করি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও অন্যরা সহায়তা করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ উদ্যোগে এখনো কোনো ফল আসেনি। আমি মনে করি, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব আছে এবং এটি বাস্তবতা। চীন যেন এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখে, যাতে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারে তাদের অধিকার ও নিরাপত্তাসহ।’
জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান এবং নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাণিজ্য শুধু বাজার–সুবিধার ওপর নির্ভর করে না। প্রক্রিয়ার ওপরও নির্ভর করে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়টি। তাই চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শতভাগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে আমাদের অশুল্ক বাধার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হবে। আপস নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি জড়িত।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশে চীনা ঋণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। এটা বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ। কাজেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। চীনা ঋণের মধ্যে সরবরাহ ঋণ রয়েছে, যা পরিশোধের সময়সীমা কম। গ্রেস পিরিয়ডও কম। শর্ত কড়াকড়ি থাকে, কমিটমেন্ট চার্জের হারও বেশি। ভবিষ্যতে এগুলোতে পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে কি না, বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মতে, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের জন্য নির্ধারিত বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে যথাযথভাবে চীনা বিনিয়োগ না হলে কর্ণফুলী টানেল আর্থিকভাবে টেকসই হবে না। দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে আরও স্বচ্ছতা আনা উচিত।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বাংলাদেশের সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদার হিসেবে চীন দৃঢ়ভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশ এবং জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির প্রচেষ্টায় সমর্থন করে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বিআইআইএসএসের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এফ এম গওসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক ইয়াং জেইমিয়ান ও বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা এমন মন্তব্য করেছেন। ঢাকায় চীনের দূতাবাসের সহায়তায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজ (এসআইআইএস–ডিইউ) এ আলোচনার আয়োজন করে।
সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ তার ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। ফলে বিপ্লব–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎকে আরও ব্যাপক পরিসর থেকে বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষ করে বিপ্লব–পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গতিপথ এবং অন্যান্য নানা উপাদান চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে হয়তো প্রভাবিত করতে পারে। এসব উপাদানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তনশীল বৈচিত্র্যময়।
ঢাকা–বেইজিং সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যা অন্তর্বর্তী সরকার অব্যাহত রাখতে চায় ইঙ্গিত দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রতিরক্ষা। বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী চীন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে চীন। ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে চীনের কাছ থেকে আরও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তাঁর বক্তৃতায় দুই দেশের বাণিজ্যে অসম পরিস্থিতি দূর করার স্বার্থে চীনের বাজারে বাংলাদেশের অশুল্ক বাধা অপসারণের ওপর জোর দেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে চীনের দেওয়া ঋণের নানা রকম শর্ত পুনর্মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের মাধ্যমে চীনে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হলে আমাদের জন্য ভালো হবে। চীনের সহায়তায় কিছু প্রকল্প চলমান আছে এবং আমরা আশা করি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও অন্যরা সহায়তা করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ উদ্যোগে এখনো কোনো ফল আসেনি। আমি মনে করি, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব আছে এবং এটি বাস্তবতা। চীন যেন এ বিষয়ে আরও বেশি ভূমিকা রাখে, যাতে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে পারে তাদের অধিকার ও নিরাপত্তাসহ।’
জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান এবং নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাণিজ্য শুধু বাজার–সুবিধার ওপর নির্ভর করে না। প্রক্রিয়ার ওপরও নির্ভর করে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়টি। তাই চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শতভাগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে আমাদের অশুল্ক বাধার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হবে। আপস নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি জড়িত।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশে চীনা ঋণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। এটা বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ। কাজেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। চীনা ঋণের মধ্যে সরবরাহ ঋণ রয়েছে, যা পরিশোধের সময়সীমা কম। গ্রেস পিরিয়ডও কম। শর্ত কড়াকড়ি থাকে, কমিটমেন্ট চার্জের হারও বেশি। ভবিষ্যতে এগুলোতে পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে কি না, বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মতে, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের জন্য নির্ধারিত বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে যথাযথভাবে চীনা বিনিয়োগ না হলে কর্ণফুলী টানেল আর্থিকভাবে টেকসই হবে না। দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে আরও স্বচ্ছতা আনা উচিত।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বাংলাদেশের সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদার হিসেবে চীন দৃঢ়ভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশ এবং জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির প্রচেষ্টায় সমর্থন করে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে বিআইআইএসএসের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এফ এম গওসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক ইয়াং জেইমিয়ান ও বিসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।