ঢাকা আফতাবনগর পাসপোর্ট অফিসে ঘুস-দুর্নীতির যেন শেষ নেই। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পাসপোর্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেকদিকে খুলে যায় দুর্নীতির নতুন পথ। বিশেষ করে নতুন এক ভিন্নমাত্রায় আফতাবনগর পাসপোর্ট অফিস যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে দালালদের দিয়ে ফাইল মার্ক করে চলে ঘুসের কারবার। যার প্রমান রয়েছে সাংবাদিকদের হাতে।
আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বৈধ পথে আসলে কেউ নাকি পাসপোর্ট করতেই পারে না। এমন সংবাদের ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিক ভোরের সময় রিপোর্টার অনুসন্ধান করতে মাঠে নামে। নিয়ম অনুযায়ী একটি নতুন পাসপোর্ট করতে গেলে অনেক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। যেখানে গ্রাহকের পরিচয় পত্র,বাবা- মার পরিচয় পত্র,জন্ম সনদ,ভাড়াটিয়া হলে অফিসের আইডি কার্ড কিংবা চাকুরীর প্রত্যয়ন পত্র এবং নিজ বাসার ইউনিটি বিল ইত্যাদি আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হল এ সকল মূল্যবান কাগজপত্র না থাকলে কি করা যায় নতুন পাসপোর্ট? তাই জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল রেখে আমরা একটি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি। যেই আবেদনে ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। যথাযথ সময়ে আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এসে উপস্থিত হন নতুন পাসপোর্ট নবায়নকারী। প্রথমেই বলেছি নতুন পাসপোর্ট তৈরি করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। আমরা তা জেনেও একটি কাগজ(জব আইডি কার্ড) ইচ্ছাকৃতভাবে ফাইলে সাথে না দিয়ে নিচতলার কাউন্টারে জমা করি। সঙ্গে সঙ্গে সেই কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা একজন অফিস সহকারী ফাইলে জব আইডি কার্ড না দেখতে পেয়ে আবেদনটি সেদিনকার জন্য বাতিল করে এবং তিনি জানান পরিপূর্ণ কাগজ সংযোজন করে পরবর্তী দিনে এসে আবার ফাইলটি জমা দেওয়ার জন্য। এখন আমাদের ভিন্ন রাস্তা খুজার পালা। যেভাবেই হোক আমরা চেষ্টা করব কিভাবে কাগজ ছাড়া একটি পাসপোর্ট তৈরি করতে পারি। পাসপোর্ট অফিস থেকে বের হবার পর দেখা হলো এক দালালের সাথে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেন জব আইডি কার্ড ছাড়াই তিনি আমাদের পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করবেন। কিন্তু কিভাবে কি তা জানতে চাইলে তিনি জানান ২,০০০ টাকা লাগবে। তার এমন কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা রাজি হয়ে গেলাম এবং ১,৬০০ টাকার বিনিময়ে তার সাথে ডিট করে ফেললাম। অতএব তিনি আমাদেরকে জানালেন আগামীকাল ০১ সেপ্টেম্বর সকালের এসে তাকে যেন কল করি। অর্থাৎ নির্ধারিত তারিখের একদিন পর আমরা আবার জব আইডি কার্ড কাগজ ছাড়াই ফাইল টি জমা করব। অনেক প্রশ্নের ঘুরপাক খেতে লাগলো মাথায়। এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে গত ১ সেপ্টেম্বর আবার রামপুরা আফতাব নগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে টিম ভোরের সময়। নির্ধারিত সময়ে এসে কল করলাম সেই দালালের কাছে। তিনি জানান পাসপোর্ট অফিসের অপর পাশে ৮ নাম্বার এভিনিউ এক নাম্বার রোডে হাতের বা পাশে স্টার কম্পিউটার এন্ড স্টেশনারি দোকান রয়েছে সেখানে আসতে। তার কথা অনুযায়ী আমরা দোকানটিতে প্রবেশ করা মাত্রই সে আমাদের কাছ থেকে ফাইটি চেয়ে নেয় এবং দোকানের স্টাফ কম্পিউটার অপারেটরের কাছে আমার ফাইলটি দেয়। তখন কম্পিউটার অপারেটর ইমন আমার ফাইলের প্রথম পাতায় জন্ম তারিখের উপর একটি কলমের চিহ্ন(মার্ক) ও তৃতীয় পাতায় সংযুক্ত দলিলাদির তালিকার বাম পাশে আরেকটি কলমের চিহ্ন(মার্ক) করে ফাইটি হাতে দেয়। কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আমাদের কাছ থেকে ১,৬০০ টাকা নিয়ে নেয়। এখন আমাদের ফাইল নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে ঢোকার পালা। অফিসে ঢোকার আগে দালাল আমাদেরকে জানায় সরাসরি দ্বিতীয় তালার ২০১ নম্বর রুমে ফাইলটি জমা দিবেন। দালালের কথা অনুযায়ী আমরা ২০১ নম্বর রুমে প্রবেশ করি। প্রথমে দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য ইমরান আমার ফাইলটি দেখে ২০১ নাম্বার রুমের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী পরিচালক এই টেবিলে ফাইলটি জমা দেয়। সেই রুমের দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারী পরিচালক মুসলিমা বেগম কোন কিছু চিন্তা না করে কলমের কালির চিহ্ন(মার্ক) দেখে আমার ফাইলটি সই করে এবং ৩০৪ নাম্বার রুমে গিয়ে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে বলে। অতঃপর আমাদের কাজ শেষ। নিয়ম অনুযায়ী জরুরী একটি কাগজ ছাড়াই আমাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে সহযোগিতা করলেন দালাল ও অফিস সহকারি। কি কেন কিভাবে অর্থের বিনিময়ে কাজটি করল তা জানতে সরাসরি দালাল ও অফিস সহকারীর মুখোমুখি টিম ভোরের সময়।
প্রথমে পরিচয় হওয়া যাক সেই দালালের সাথে। কবির হোসেন। থাকেন রামপুরায়। আফতাব নগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালালীর কাজের বয়স তিন বছর। দেখলে মনে হয় না ভাজা মাছটা উল্টিয়ে খেতে পারে। কিন্তু তার কাজের হাত অনেক উপরে। কি না করতে পারে! একটি পাসপোর্ট তৈরিতে কারো বয়স বাড়ানো কমানো ইত্যাদি আরো অবৈধ অনেক কাজের সাথে জড়িত এই দালাল কবির। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এ সকল প্রতিটি দোকানেই রয়েছেন ডজনখানেক দালাল। কবিরের মত আরো অনেক দালালের পরিচয় উঠে এসেছে। একজনের নাম খবির আরেকজন রাসেল অন্য একজন বাহার। কিছুক্ষণ আগে যেই ফাইলটির জন্য কবিরকে ১,৬০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল সেই ফাইলটির বিষয়ে সরাসরি কবিরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানাল প্রতিটি ফাইলের জন্য অফিসকে ১,৩০০ টাকা করে দিতে হয়। তাছাড়া মার্ক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ষ্টার কম্পিউটার এন্ড স্টেশনারি দোকানের মালিক মহসিন ভাইয়ের কম্পিউটারের দোকানের স্টাফ ইমনকে দিয়ে মার্ক করাই। কখনো কখনো ফাইল এর কোথাও কলমের কালির চিহ্ন(মার্ক), কখনো ব্যক্তির মেইল আইডি নাম্বার দিয়ে সংকেত প্রদান করি। এ সকল সংকেতের চিহ্ন অফিস সহকারী দেখলেই বুঝতে পারে এক একটি ফাইল যেন টাকার খাম। তারপর নির্ধারিত রুমে ফাইলটি জমা হলেই অফিস সহকারীরা চিহ্নিত করতে পারেন এবং দ্রুত কাজটি সম্পূর্ণ করে থাকেন। আমাদের বিষয়টিও দালাল কবিরের কথা মতই হয়েছিল। আমরা যখন ফাইলটি মার্ক করে ২০১ নম্বর রুমে জমা করি তখনই কবিরের কথামতো আমাদের কাজ সম্পন্ন হয়। এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ২০১ নাম্বার রুমে টিম ভোরের সময়। জানিয়ে রাখি ২০১ নাম্বার রুমের দায়িত্বে উপ সহকারী পরিচালক মুসলিমা বেগম। অল্প কিছুদিন হলো আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট এসে যোগদান করেন। ফাইল মার্ক করার বিষয়ে মুসলিমা বেগম জানান তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। যদি তিনি না জানেন, তাহলে কিভাবে জব আইডি কার্ড কাগজ ছাড়া ফাইটি সই করে ছেড়ে দিলেন। তাছাড়া ফাইটি সই করার আগে কার ফাইল,কেন তার কাছে নিয়ে এসেছে, কি জন্য কোন কিছুই জানতে চায় নি কেনো তা একটি প্রশ্ন থেকে যায়। এ সকল প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি ২০১ নম্বর রুমের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারি উপ-সহকারী পরিচালক মুসলিমা বেগম। ততক্ষণই আমরা যা বুঝার বুঝে গিয়েছি ফাইলের মার্ক দেখে তিনি সই করে দিয়েছেন।
আফতাব নগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক শরিফুল ইসলাম সাথে কথা বলি আমরা। শুরু থেকে কিভাবে অতি প্রয়োজনীয় একটি কাগজ ছাড়া টাকা দিয়ে ফাইলে চিহ্ন(মার্ক) নিয়ে একটি পাসপোর্ট করা যায় তা শুনেন এবং রীতিমতন চমকে যান দায়িত্ব থাকা উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম। অতএব তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যারা যারা এই মার্ক করার পেছনে জড়িত তাদের সকলকেই কর্মের ফল পেতে হবে। তিনি আরো জানান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে এটাই তাদের প্রত্যাশা।
আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বৈধ পথে আসলে কেউ নাকি পাসপোর্ট করতেই পারে না। এমন সংবাদের ভিত্তিতে জাতীয় দৈনিক ভোরের সময় রিপোর্টার অনুসন্ধান করতে মাঠে নামে। নিয়ম অনুযায়ী একটি নতুন পাসপোর্ট করতে গেলে অনেক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। যেখানে গ্রাহকের পরিচয় পত্র,বাবা- মার পরিচয় পত্র,জন্ম সনদ,ভাড়াটিয়া হলে অফিসের আইডি কার্ড কিংবা চাকুরীর প্রত্যয়ন পত্র এবং নিজ বাসার ইউনিটি বিল ইত্যাদি আরো অনেক কিছুর প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হল এ সকল মূল্যবান কাগজপত্র না থাকলে কি করা যায় নতুন পাসপোর্ট? তাই জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে মিল রেখে আমরা একটি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি। যেই আবেদনে ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। যথাযথ সময়ে আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এসে উপস্থিত হন নতুন পাসপোর্ট নবায়নকারী। প্রথমেই বলেছি নতুন পাসপোর্ট তৈরি করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। আমরা তা জেনেও একটি কাগজ(জব আইডি কার্ড) ইচ্ছাকৃতভাবে ফাইলে সাথে না দিয়ে নিচতলার কাউন্টারে জমা করি। সঙ্গে সঙ্গে সেই কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা একজন অফিস সহকারী ফাইলে জব আইডি কার্ড না দেখতে পেয়ে আবেদনটি সেদিনকার জন্য বাতিল করে এবং তিনি জানান পরিপূর্ণ কাগজ সংযোজন করে পরবর্তী দিনে এসে আবার ফাইলটি জমা দেওয়ার জন্য। এখন আমাদের ভিন্ন রাস্তা খুজার পালা। যেভাবেই হোক আমরা চেষ্টা করব কিভাবে কাগজ ছাড়া একটি পাসপোর্ট তৈরি করতে পারি। পাসপোর্ট অফিস থেকে বের হবার পর দেখা হলো এক দালালের সাথে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেন জব আইডি কার্ড ছাড়াই তিনি আমাদের পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করবেন। কিন্তু কিভাবে কি তা জানতে চাইলে তিনি জানান ২,০০০ টাকা লাগবে। তার এমন কথা শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা রাজি হয়ে গেলাম এবং ১,৬০০ টাকার বিনিময়ে তার সাথে ডিট করে ফেললাম। অতএব তিনি আমাদেরকে জানালেন আগামীকাল ০১ সেপ্টেম্বর সকালের এসে তাকে যেন কল করি। অর্থাৎ নির্ধারিত তারিখের একদিন পর আমরা আবার জব আইডি কার্ড কাগজ ছাড়াই ফাইল টি জমা করব। অনেক প্রশ্নের ঘুরপাক খেতে লাগলো মাথায়। এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে গত ১ সেপ্টেম্বর আবার রামপুরা আফতাব নগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে টিম ভোরের সময়। নির্ধারিত সময়ে এসে কল করলাম সেই দালালের কাছে। তিনি জানান পাসপোর্ট অফিসের অপর পাশে ৮ নাম্বার এভিনিউ এক নাম্বার রোডে হাতের বা পাশে স্টার কম্পিউটার এন্ড স্টেশনারি দোকান রয়েছে সেখানে আসতে। তার কথা অনুযায়ী আমরা দোকানটিতে প্রবেশ করা মাত্রই সে আমাদের কাছ থেকে ফাইটি চেয়ে নেয় এবং দোকানের স্টাফ কম্পিউটার অপারেটরের কাছে আমার ফাইলটি দেয়। তখন কম্পিউটার অপারেটর ইমন আমার ফাইলের প্রথম পাতায় জন্ম তারিখের উপর একটি কলমের চিহ্ন(মার্ক) ও তৃতীয় পাতায় সংযুক্ত দলিলাদির তালিকার বাম পাশে আরেকটি কলমের চিহ্ন(মার্ক) করে ফাইটি হাতে দেয়। কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আমাদের কাছ থেকে ১,৬০০ টাকা নিয়ে নেয়। এখন আমাদের ফাইল নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে ঢোকার পালা। অফিসে ঢোকার আগে দালাল আমাদেরকে জানায় সরাসরি দ্বিতীয় তালার ২০১ নম্বর রুমে ফাইলটি জমা দিবেন। দালালের কথা অনুযায়ী আমরা ২০১ নম্বর রুমে প্রবেশ করি। প্রথমে দায়িত্বে থাকা একজন আনসার সদস্য ইমরান আমার ফাইলটি দেখে ২০১ নাম্বার রুমের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী পরিচালক এই টেবিলে ফাইলটি জমা দেয়। সেই রুমের দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারী পরিচালক মুসলিমা বেগম কোন কিছু চিন্তা না করে কলমের কালির চিহ্ন(মার্ক) দেখে আমার ফাইলটি সই করে এবং ৩০৪ নাম্বার রুমে গিয়ে ছবি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে বলে। অতঃপর আমাদের কাজ শেষ। নিয়ম অনুযায়ী জরুরী একটি কাগজ ছাড়াই আমাদের পাসপোর্ট তৈরি করতে সহযোগিতা করলেন দালাল ও অফিস সহকারি। কি কেন কিভাবে অর্থের বিনিময়ে কাজটি করল তা জানতে সরাসরি দালাল ও অফিস সহকারীর মুখোমুখি টিম ভোরের সময়।
প্রথমে পরিচয় হওয়া যাক সেই দালালের সাথে। কবির হোসেন। থাকেন রামপুরায়। আফতাব নগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দালালীর কাজের বয়স তিন বছর। দেখলে মনে হয় না ভাজা মাছটা উল্টিয়ে খেতে পারে। কিন্তু তার কাজের হাত অনেক উপরে। কি না করতে পারে! একটি পাসপোর্ট তৈরিতে কারো বয়স বাড়ানো কমানো ইত্যাদি আরো অবৈধ অনেক কাজের সাথে জড়িত এই দালাল কবির। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। এ সকল প্রতিটি দোকানেই রয়েছেন ডজনখানেক দালাল। কবিরের মত আরো অনেক দালালের পরিচয় উঠে এসেছে। একজনের নাম খবির আরেকজন রাসেল অন্য একজন বাহার। কিছুক্ষণ আগে যেই ফাইলটির জন্য কবিরকে ১,৬০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল সেই ফাইলটির বিষয়ে সরাসরি কবিরকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানাল প্রতিটি ফাইলের জন্য অফিসকে ১,৩০০ টাকা করে দিতে হয়। তাছাড়া মার্ক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান ষ্টার কম্পিউটার এন্ড স্টেশনারি দোকানের মালিক মহসিন ভাইয়ের কম্পিউটারের দোকানের স্টাফ ইমনকে দিয়ে মার্ক করাই। কখনো কখনো ফাইল এর কোথাও কলমের কালির চিহ্ন(মার্ক), কখনো ব্যক্তির মেইল আইডি নাম্বার দিয়ে সংকেত প্রদান করি। এ সকল সংকেতের চিহ্ন অফিস সহকারী দেখলেই বুঝতে পারে এক একটি ফাইল যেন টাকার খাম। তারপর নির্ধারিত রুমে ফাইলটি জমা হলেই অফিস সহকারীরা চিহ্নিত করতে পারেন এবং দ্রুত কাজটি সম্পূর্ণ করে থাকেন। আমাদের বিষয়টিও দালাল কবিরের কথা মতই হয়েছিল। আমরা যখন ফাইলটি মার্ক করে ২০১ নম্বর রুমে জমা করি তখনই কবিরের কথামতো আমাদের কাজ সম্পন্ন হয়। এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ২০১ নাম্বার রুমে টিম ভোরের সময়। জানিয়ে রাখি ২০১ নাম্বার রুমের দায়িত্বে উপ সহকারী পরিচালক মুসলিমা বেগম। অল্প কিছুদিন হলো আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট এসে যোগদান করেন। ফাইল মার্ক করার বিষয়ে মুসলিমা বেগম জানান তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। যদি তিনি না জানেন, তাহলে কিভাবে জব আইডি কার্ড কাগজ ছাড়া ফাইটি সই করে ছেড়ে দিলেন। তাছাড়া ফাইটি সই করার আগে কার ফাইল,কেন তার কাছে নিয়ে এসেছে, কি জন্য কোন কিছুই জানতে চায় নি কেনো তা একটি প্রশ্ন থেকে যায়। এ সকল প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি ২০১ নম্বর রুমের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারি উপ-সহকারী পরিচালক মুসলিমা বেগম। ততক্ষণই আমরা যা বুঝার বুঝে গিয়েছি ফাইলের মার্ক দেখে তিনি সই করে দিয়েছেন।
আফতাব নগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ পরিচালক শরিফুল ইসলাম সাথে কথা বলি আমরা। শুরু থেকে কিভাবে অতি প্রয়োজনীয় একটি কাগজ ছাড়া টাকা দিয়ে ফাইলে চিহ্ন(মার্ক) নিয়ে একটি পাসপোর্ট করা যায় তা শুনেন এবং রীতিমতন চমকে যান দায়িত্ব থাকা উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম। অতএব তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যারা যারা এই মার্ক করার পেছনে জড়িত তাদের সকলকেই কর্মের ফল পেতে হবে। তিনি আরো জানান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে এটাই তাদের প্রত্যাশা।