নতুন বোতলে পুরাতন মদ, নগ্ন তরুণীদের দিয়ে ফাঁদ। রাতে কিংফিসারে তরুণ যুবক কাত। তরুণীর দেহ আর অবৈধ মদের বিক্রি করে এভাবেই গুলশান দুবাই আমেরিকায় আলিশান প্রাসাদের মালিক হয়েছে চাঁদপুরের মতলব থেকে ঢাকায় আসা দরিদ্র পরিবারের অবহেলিত মুক্তার হোসেন। কে এই মুক্তার? তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের আগেই পালিয়েছে সেই মুক্তার। আত্মগোপন থাকলেও অনানুষ্ঠানিক ভাবে মদের বাণিজ্য টিকিয়ে রাখছে মন্ত্রী কামালের নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তা মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ডিজি মুস্তাফিজ।
পুলিশ বলছে ২০০৮ সাল পর্যন্ত গুলশানের বারিধারা এলাকার একটি হোটেলে ওয়েটারের চাকুরী করে মুক্তার। আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছত্রছায়ায় ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চোরাকারবারি, অবৈধ মাদকের ব্যবসায়ী, নারী পাচারকারী, পতিতালয়ের দালালী, ব্যবসায়ীদের কাছে নারী সাপ্লায়ার, অন্যের জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানানরকম অবৈধ ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে এখন গুলশান উত্তরা নারায়নগঞ্জসহ একাধিক স্থানে ৫/৬টি মদের বার খুলে বহু ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত আছে। চাঁদপুরের মতলব উপজেলার জহিরাবাদ এলাকার হতদরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া মুক্তারের বাবা ছিলো ভ্যান চালক। দেশের চলমান সংস্কারে মুক্তারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুক্তারের অবৈধ মদের বাণিজ্য বন্ধে যেহেতু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোন ভূমিকা নেই তাতেই প্রতীয়মান হয় এমন অবৈধ বানিজ্য টিকিয়ে রাখছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খোদ মহাপরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান।
আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ নেতা মন্ত্রী এমপি আমলাদের ছত্রছায়ায় চালানো অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা গাঢাকা দিলেও অনানুষ্ঠানিক ভাবে সেই অবৈধ মদের ব্যবসা এখনও চলছে। এসব বার থেকে মাদক নির্মূলে সরকারের একমাত্র সংস্থাটির দায়িত্ব মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করে তরুণ-যুবকদের রক্ষা করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের চাঁদাবাজ আমলারা এই সংস্থাটির চেয়ারে বসে মাদক নির্মূলে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। আসলে মাদক নিয়ন্ত্রণে কোন টাকা আমলাদের পকেটে ঢোকে না, বরং এর সম্প্রসারণে নিয়মিত মোটা অংকের টাকা পাওয়ার আশা অধিকাংশ আমলাদেরই আছে। ফ্রী নারী ফ্রী মদ পেতে প্রতিদিন এসব বার গুলোতে বহু প্রভাবশালী লোকের আনাগোনা দেখা যায়। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদার লেনদেনের ভাগবাটোয়ারা হয় এই মদের বারে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মাদকদ্রব্যে নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে এসেছেন আওয়ামী পছন্দনীয় কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান। ফ্যাসিবাদী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতিকে দিয়ে তদবির করে ডিজি মুস্তাফিজ সংস্থাটির ডিজি পদে বসছেন।
ওয়েটার মুক্তার অবৈধ মদের কিং:
ঢাকার গুলশান ২ সার্কেল মেইন চত্বরে পাঁচতারকা হোটেল ওয়েষ্টইন। এর উত্তর পাশে ব্যস্ততম একটি ভবন যেখানে আছে সকল অবৈধ কার্যক্রম। ওয়েষ্টইন থাই স্পা, এইচ হোটেল আবাসিক, কিং ফিসার বার, ক্যাফে সেলিব্রিটিয়া বার, নিউ ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্ট, ও কাচ্চি ভাই ছাড়াও যৌন ব্যবসার নানাবিধ ফন্দি এই ভবন থেকেই হয়। সেখানে গতকাল মদের ক্রেতা সেজে কিংফিশার বারে প্রবেশ করে সকালের সময় টিম, দেখতে পায় রঙিন আলোকসজ্জা, মাতাল পুরুষ, নগ্ন নারী, উতালপাতাল মিউজিক, নগদ টাকার লেনদেন। যেন থাইল্যান্ডের অন্যতম সেরা সৈকত পাতায়া। বাড্ডা এলাকা থেকে আসা একলোককে বেঁধে রাখতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানাযায় লোকটি মূল্য না জেনে বহু দামী দামী মদ খেয়ে ফেলছে। প্রায় ২৭ হাজার টাকা বিল হলেও লোকটির কাছে ছিলো মাত্র তিনশতো আশি টাকা। বিল না দিতে পারায় কিং ফিসার কর্তৃপক্ষ তাকে বেঁধে আটকিয়ে রাখে। অবশেষে পরের দিন সকালে জাহাঙ্গীর নামের সেই লোকের স্ত্রী ও কন্যা ফোন পেয়ে সেখানে এসে বিল পরিশোধ করে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যায়। লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি নিয়ে কোথাও নালিশ করারও সুযোগ ছিলো না ভুক্তভোগী এই লোকটির। ব্যাংকের পাতায়ার মতোই আগন্তুক পুরুষের মুগ্ধ করতে সন্ধ্যার পরে কিং ফিসার মদের বারে শতো শতো নারী-তরুণীর সমারোহ ঘটে। প্রতি রাতে দশ কোটিরও বেশি নগদ টাকার লেনদেন হয় এই বারে। বিদেশি নানান ব্রান্ডের মদের মজুদ আছে এখানে। নানা বয়সী মেয়েদের হাজির করে তাদের ফাঁদে ফেলে তরুণ যুবকদের নিকট থেকে কেড়ে নেয় নগদ টাকা। সুন্দরী মেয়ের আলাদা তালিকা করে তাদেরকে সাপ্লাই দেয় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে। ওই মেয়েদেরকে দিয়ে ব্যাবসায়ীদের সাথে টেলিফোনে কথা বলিয়ে তা রেকর্ড রেখে আলাদ ভাবে ব্লাকমেলিং করে কিং ফিসারের মালিক মুক্তার ও তার কোম্পানির ম্যানেজার হাসান।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ডান হাত হিসেবে পরিচিত গুলশানের একটি হোটেলের ওয়েটার হিসেবে ২০০৮ সালে চাকরি করে গাজী মুক্তার হোসেন। চাঁদপুরের মতলব থেকে এসে রাজধানীর গুলশানে আবাসিক হোটেলে নারী সাপ্লাই এবং অবৈধ মদের ব্যবসা করতে করতে এখন টাকার পাহার গড়েছে এই মুক্তার। আপাদমস্তক মূর্খ এক লোক গুলশানে এতোগুলা বাড়ি ছাড়াও দুবাই ও আমেরিকায় এতো সম্পদ গড়লেন কি করে! এতো টাকার মালিক হওয়ার রহস্য কি! জানতে অনুসন্ধানে নামে সকালের সময়। চাঁদপুরে খোঁজ নিয়ে জানাযায় অবৈধ মদের কারবারি মুক্তার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক পরিচালক সেলিম খানের কাছে নারী ও মদ সাপ্লাই দিয়ে তার বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। সেলিম ও মুক্তার একই জেলার লোক। মুক্তার যেমন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পালিত সন্ত্রাসী তেমনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী দিপু মনির টাকার মেশিন হিসেবেই সেলিম খানের নাম পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। এসব ঘটনায় তিনি জেলও খাটেন। মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত দুদকে তার বিরুদ্ধে মামলাও চলমান ছিলো। শেখ হাসিনার পতনের পরেই চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত এই চেয়ারম্যান বালু খেকো সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। সেলিম খানকে গণপিটুনি দেয়ার সময় উত্তেজিত জনতা তার কাছে জানতে চায় পতিতালয়ের দালাল মুক্তার কোথায়। স্থানীয় মানুষ বলছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আনারস প্রতীক নিয়ে মুক্তার চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন করেছিলো। তবে যে এলাকায় প্রচারের জন্য যেতো সেখানেই মানুষ মুক্তারের ওপরে হামলার করতো। মুক্তার ঢাকায় নারীদের নিয়ে যৌন ব্যবসা এবং অবৈধ মদের ব্যবসা করে তাই এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তাকে ঘৃণা করে। গ্রামের মানুষ শহরের তুলনায় কিছুটা ধার্মিক বেশি। চাঁদপুরের মানুষ সেখানকার মসজিদ মাদ্রাসায় মুক্তারকে ঢুকতেই দেয় না।
তরুণীদের যৌনতায় বাধ্য করে এজিএম:
গতকাল কিংফিশার মদের বারের এজিএম মনোয়ারের সাথে আলাপ হয় হটসঅ্যাপে। নতুন একটি মদের বার হচ্ছে সেখানে তাকে জিএম করা হবে এমন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা। তখন এজিএ মনোয়ার তার মনের কথা একে একে বের করতে শুরু করে। অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করার অনুরোধও করছেন তিনি। বলছেন আমাদের বারের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোন স্টাফ যদি বাইরে কারো সাথে কথা বলে, তার মাথা কেটে ফেলা হয়। তাদের মালিক মুক্তার হোসেন অত্যন্ত ভয়ংকর রূপের লোক। তিনি বলেন শুনেছি আমাদের বড় একসময় হোটেলের ওয়েটার ছিলেন। এই ব্যবসার লাভ লস তিনি সবকিছুই সহজে পরিমাপ করতে পারেন। এই মুহুর্তে মালিক কোথায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে স্যার দেশের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, শুনেছি দুবাই আমাদের বার আছে। এজিএম বলেন বড় স্যারের অনুপস্থিতিতে গ্রুপ জিএম হাসান সমস্ত ব্যবসা দেখবাল করে। তাই জিএম যা বলবেন তার চিন্তার বাইরে এজিএম কোন মন্তব্য করতে চান না। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে মানোয়ারের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করা হয়। মনোয়ার শুরুতেই সকালের সময়ের কাছে তার একটি বিপদের কথা জানায়। কিংফিশার বারে আসা এক তরুনীকে পছন্দ করে ফ্রী মদ খাওয়ায়ে ওই তরুনীকে যৌনতায় বাধ্য করে এই মনোয়ার। মেয়েটির মোবাইল +880 133483452(.) ট্রুকলারে তার নাম পাওয়া যায় নিশাত নাওয়ার। চলতি বছরের ২২ মে রাতে এজিএম মেয়েটিকে নিয়ে ধানমন্ডির একটি বাসায় অতিরিক্ত সময় যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে এই প্রতিবেদকের সাথে। সারা রাত মেয়েটির সাথে এজিএম মনোয়ার ছিলো। সকালে ধানমন্ডি থেকে ফিরে বিকেলে কিংফিশারে ডিউটিরত এজিএমকে নিশাত নাওয়ারের মোবাইল নম্বর থেকে কেউ একজন ফোন দিয়ে এজিএম মনোয়ারকে বলে নিশাত অসুস্থ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সেখানে বেশ কিছু টাকা দরকার। এজিএম মনোয়ার ধারণা করছে হয়তো মেয়েটি মানোয়ারের নিকট থেকে কিছু পয়সা নেয়ার ফন্দি করছে। তবে এজিএমকে হটসঅ্যাপে সেই মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্র পাঠিয়েছিলো। এই প্রতিবেদককে হাসপাতালে ভর্তির সেইসকল কাগজপত্র এজিএম হটসঅ্যাপে দিয়েছিলো। পরে মেয়েটি আদৌও বেঁচে ছিলো কিনা তা নিয়ে কয়েকদিন খুব ভয়ে ছিলো এজিএম মনোয়ার। মনোয়ার কোন বিপদের মুখোমুখি হলে এই প্রতিবেদকের নিকট আগাম সহোযোগিতায় চেয়ে রেখেছিলো। মনোয়ার বলে এই বারে এসে বহু মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে পাচার হয়েছে এতে বার মালিকের কোন ক্ষতি হয়নি।
ডিবি পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা সকালের সময়কে জানিয়েছেন মুক্তার হোসেন অধিকাংশ সময়ে বিদেশে পালিয়ে থাকে। তার নামে একাধিক মামলা এখনও চলমান। প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে মুক্তার অবৈধভাবে নানারকম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ডিবির করা মাদকের মামলার আসামি ক্যাফে সেলিব্রিটিয়া ও কিং ফিশার রেস্টুরেন্ট এবং বনানী লেকের পাশে লেকভিউ আবাসিক হোটেল ও বারের মালিক মোক্তার হোসেন দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালানোর সময় বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করেছিলো ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর। এর পরে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত হয়েছে। ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর উত্তরার কিংফিশার রেস্টুরেন্টের লেকভিউ বারে ডিবি অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করে। একই রাতে তার গুলশানের বারেও অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানের ঘটনায় গুলশান থানায় করা মামলায় মুক্তারকে আসামি করা হয়। মুক্তার হোসেন একটি বড় ধরনের প্রভাবশালী চক্রের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন মদের অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালেও বারিধারায় অ্যাভিনিউ নামে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন এই মুক্তার। এখন কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনেছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরাও সেখানে বসবাস করছেন। মুক্তারের বন্ধু গুলশান-২ নম্বরে আগোরা শপিংমলের ৪ তলায় অবস্থিত ‘র ক্যানভাস রেস্টুরেন্ট এন্ড বার’-এর মালিক। সেখানে অভিযান চালিয়েছিলো ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদন্ত করে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা হয়েছিলো। 'র ক্যানভাস রেস্টুরেন্ট এন্ড বারের' নিবন্ধন নং- ০০২৮৪৭০০৯-০১০১। প্রতিষ্ঠানটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে বারে মদ ও মদ জাতীয় দ্রব্য এবং রেস্টুরেন্টে খাবারের সেবা প্রদান করে। র ক্যানভাসের ম্যানেজার শিমুলের সাথে গতকাল সকালের সময়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমাদের বারে অবৈধ কিছু রাখি না। আমাদের বারের মালিক থাকে বিদেশে থাকে একজন জিএম আছে সে মাঝে মাঝে আসে কিন্তু বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের বার দেখবাল করে। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতার নাম জানতে চাইলে শিমুল বলেন এটা আমি ভুল করে বলে ফেলছি। বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা পরিচালনা করে এমন কথা মোবাইলে রেকর্ড করা হয়েছে তা জানতে পেরে শিমুল বলেন আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন সামনা সামনি সব বিষয়ে আলাপ করবো। কথা শেষ করার পরে র ক্যানভাস বারের সেই জিএম শিমুল 01782-35957(.) এই মোবাইল নম্বর থেকে সকালের সময়ের প্রতিবেদককে ধারাবাহিক শতবার ফোন করেছে। বিকেল ৩টা থেকে রাত সারে ১০টা (এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) ফোন দিতেছিলো। সকালের সময় তার ফোন গ্রহণ করেনি।
যা বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়:
মন্ত্রনালয়ের তথ্য কর্মকর্তা ফয়সাল হাসান সকালের সময়কে বলেন মাদক নির্মূল ইন্টেরিয়াম সরকারের অগ্রগতি লক্ষনীয়। ইতোমধ্যেই মাদকের অনেক গডফাদার গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ মদের সকল বার বন্ধ করতে বর্তমান সরকার শূন্য সহনশীলতা দেখাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মাদকের গডফাদাররা পার পাবেনা বলেও হুশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করছেন এই কর্মকর্তা। তিনি সকালের সময়ের এই প্রতিবেদককে বলছেন আপনার কাছে কোন তথ্য থাকলে জানান, সাথে সাথেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মহাপরিচালকের বক্তব্য:
গতকাল একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। টেলিফোনে একাধিক বার্তা পাঠিয়েও কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি। হটসঅ্যাপে দেয়া ফোন তিনি কেটে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ পাওয়া ডিজি মুস্তাফিজ শুরুতেই সকালের সময়কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মাদকাসক্ত তরুণ যুবকদের নিয়ে তিনি ভিন্ন একটি পরিকল্পনা হাতে নেবেন। সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি তিনি বাস্তবায়ন করবেন।
পুলিশের মন্তব্য:
মাদক নির্মূলে সরকারের স্পেশাল ফোর্স ঢাকা মেট্রো (উওর), ডিএনসি উপপরিচালক শামীম আহমেদ গতকাল সকালের সময়কে টেলিফোনে বছেন, সেপ্টেম্বরে তিনি নতুন দ্বায়িত্ব পেয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে কিং ফিসার মদের বার উত্তরা শাখায় অভিযান পরিচালনা করে দুই কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ মদ উদ্ধার করছে। সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের নেতৃত্বে ২৩ সালে কিং ফিসার অভিযান পরিচালনা করে কিং ফিসারের অবৈধ মদ উদ্ধার করে তা ফেরত দিয়েছিলো সেই ঘটনাও পুলিশের এই কর্মকর্তা জানেন। তিনি বলেন শুধু কিং ফিসার নয় বনানীতে সুইডড্রীমস হোটেলে আমরা অভিযান চালিয়ে দুই কোটি টাকারও বেশি মূল্যের অবৈধ মদ উদ্ধার করেছি। উদ্ধারের পরে আমরা অভিযুক্তদের নামে কোর্টে মামলা করেছি, সেই মামলার বিরুদ্ধে কিং ফিসারের লোকেরা কোর্টে আপিল করছে। কোট সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে তদন্তের দ্বায়িত্ব দিয়েছে। এখন কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। পুলিশের এই কর্মকর্তা সকালের সময়কে বলেছেন আপনারা তথ্য দিন আমরা সাথে সাথেই মাদক কারবারি বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। স্বার্থসংশ্লিষ্টরা আমাদের চাপ দিতেই থাকবে তবে, আমরা নিঃস্বার্থ ভাবে আমাদের পদক্ষেপ নিতে পিছিয়ে থাকবো না।
উদ্বিগ্ন গুলশান সোসাইটি:
কিং ফিসার মদের বার গুলশান সোসাইটিতে বিষফোঁড়ার যন্ত্রণার মতোই উল্লেখ করে সেখানকার স্থানীয় আবাসিক বাসিন্দারা জানিয়ে সরকারের অসৎ কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় খারাপ লোকেরা এসব অবৈধ মদের বার চালাচ্ছে। নেপথ্যে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা থাকায় তা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে ওঠে না। সংবাদ সংগ্রহে গেলে সেখানকার বাসিন্দারা ক্ষোভের সাথে বলেন এতবড় অপকর্ম বন্ধের ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা রাখা উচিৎ
তা আশানুরূপ লক্ষ করা যায় না। কিং ফিসার বার ও রেস্টুরেন্টের কাছেই নিকেতন আবাসিক থাকেন মাহবুব আলম মল্লিক। আবাসিক এই নাগরিকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের নিকেতনের গেটে গুলশান এভিনিউ ২ নাম্বার রোডে কেএফসি রেস্টুরেন্টের পাশে ক্যাফে সেলিব্রিটিয়া কিছুদিন আগে পতিতা মেয়েদের মারামারি দেখলাম সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরছে। এমন ঘটনা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এই মদের বারটি এখানতে সরাতে সরকারের কাছে তার অনুরোধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুলশান সবচেয়ে বেশি আভিজাত্যপূর্ণ এলাকা। এখানে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর নাগরিকদের বসবাস। কিন্তু কিছু খারাপ লোকেরা এখানে অবৈধ ব্যবসার বিস্তার করে এই এলাকা অনেকটা ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। সন্ধ্যার পরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার তৃতীয় শ্রেণীর কিছু নারী পুরুষ এই গুলশান জড়ো হয়। মদের বারে নাচানাচি করে, অবৈধ মেলামেশা করে এবং গভীর রাতে মাতাল অবস্থায় গুলশানের অলিগলিতে ঘোরাফেরা করে, যা এই অঞ্চলের বসবাসকারীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তিনি বলেন একটি সমাজ অনেকটা মানবজীবনের মতোই। আমাদের সকলের উচিৎ মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমাজে স্বচ্ছতা আসে এবং উন্নত হয়। ‘উন্নত’ অর্থ অনেক কিছুই হতে পারে। তবে সমাজ উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের চর্চা। যুবসমাজের সৃজনশীলতা যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে সেই সমাজ কখনো স্থির থাকে না। আমাদের দেশে মাদক নির্মূলে সরকারের ভূমিকা রহস্যজনক। আমার মনে হয় সরকারের লোকেরা চায় মাদক সমাজ থেকে পুরপুরি নির্মুল না হোক। এতে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সমাজের উন্নতি অথবা অবনতি মূল্যায়ন করা যায় যুবসমাজের উন্নতি বা অবনতির ক্ষেত্র থেকে। রাষ্ট্রকে উন্নতির পথে অব্যাহত রাখতে হলে সেই নগরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকেও উন্নতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। যুবক তরুণ তরুণীদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা, সচেতনতা ও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মাদকমুক্ত উন্নত সমাজ গড়া কঠিন নয়। তিনি বলেন, সময় এসেছে পুরো বাংলাদেশকেই নতুন করে ঢেলে সাজাবার। আজ দেশকে নতুন করে সাজাবার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।