হঠাৎ মধুমতি মডেল টাউনে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সড়ক কেটে বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এতে রাজধানীর অদূরে এই আবাসিক এলাকাটির প্লট মালিক ও বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগী প্লট মালিকরা বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ও রাজউক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন।
প্লট মালিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে বিষয়টি বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা আবেদনে বলেন, গত ১৮ নভেম্বর মধুমতি মডেল টাউনে বিদ্যুৎ ও সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে আদালত প্লট মালিকদের রেজিস্ট্রি ব্যয়সহ প্রদেয় মূল্যের দিগুণ টাকা পরিশোধ করার জন্য মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপারকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা সেই অর্থ পরিশোধ করেনি। তাছাড়া মেট্রো মেকার্স প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার্সের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে; তা ছিল বৈষম্যমূলক ও অবাস্তব। মধুমতি মডেল টাউনের অবস্থান আমিনবাজারের বিলামালিয়া ও বলিয়ারপুর মৌজা রাজউকের মাস্টার প্লানে বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিতর্কিত করা হয়েছে; যা মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এতে বলা হয়, জমিটি সরকারি খাস জমিও নয়। মধুমতি মডেল টাউনের চারপাশের ভূমির মালিকরা স্বাভাবিক জমি হিসেবে ব্যবহার করে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। কেউ বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে বিবেচিত নয় শুধু মধুমতি মডেল টাউনের কয়েক শ বিঘা জমিকে বন্যাপ্রবাহ জোন করে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে; যা বৈষম্যমূলক। এই প্রকল্পের কারণে বন্যাপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়নি। প্রকল্পের মধ্যে দুটি প্রশস্ত খাল প্রবাহমান যা কোম্পানি তার নিজস্ব ক্রয়কৃত জমিতে নিজ খরচে খনন করেছে এবং বড় একটি খাল সংস্কার করা হয়েছে। প্রকল্পে কয়েক হাজার পরিবার তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তারা জীবনের অর্জিত সকল সঞ্চয় দিয়ে প্লট ক্রয় করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। প্রকল্পের আশপাশে আরও অনেক হাউজিং ও বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্লট মালিকরা বৈধভাবে সাবকবলা দলিলের মাধ্যমে জমি ক্রয় করে সেখানে বসবাস করছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৌজার বর্তমান মূল্যের তিনগুণ টাকা ফেরত দিয়ে অথবা সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী রেজিস্ট্রি ব্যয়সহ দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত প্লটে অবস্থান করার সাংবিধানিক অধিকার সবার রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাউজিংয়ে বসবাসরত বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনওপ্রকার আলোচনা না করে কিংবা তাদের পূর্বে কোনও নোটিশ না দিয়ে রাজউক একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে-যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
মধুমতি মডেল টাউনের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার প্লট মালিক রয়েছেন। অনেকে তাদের জীবনের শেষ সম্বল বিক্রি করে এই সামান্য বাস্তু ভিটা কিনেছেন। সরকারের ভূমি অফিস প্লটগুলো রেজিস্ট্রেশন মিউটেশন ও দিয়েছে। তার ভিত্তিতে প্রায় হাজারখানের প্লট মালিক এখানে মাথা গুঁজার ঠাই করে নিয়েছেন। এখানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিদ্যুতের লাইনও দিয়েছে৷ গত প্রায় দুই দশক ধরে বাসিন্দারা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন। রাজউকের এই চিঠি দেখে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
মধুমতিতে বসবাসকারী প্লট মালিকরা বলেন, রাজউক এখানে ক্রেতাদের স্বার্থ দেখছে না। তারা অদৃশ্য শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে। ক্রেতারা যে টাকা দিয়ে প্লট কিনেছেন তার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও রাজউক এ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে আমি প্লট কিনেছি। আমার অধিকার রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে রাষ্ট্র আজ আমার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সংস্থা থেকে বেশকিছু সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, মধুমতি মডেল টাউনের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছে চিঠি দেওয়া, সংযোগ সড়ক থেকে মধুমতি মডেল টাউনকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া ইত্যাদি। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজউকের কোনও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।