facebook sharing buttonmessenger sharing buttonwhatsapp sharing buttontwitter sharing buttonlinkedin sharing buttoncopy sharing buttonprint sharing button
অ- অ+
ছবি : সংগৃহীত
X
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা ইউক্রেন যুদ্ধের গতি ও পরিস্থিতিতে বিশাল পরিবর্তন সহায়তা করছে। তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন।
যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সহায়তা আসতে অনেক দেরি হয়েছে এবং এখনকার পরিস্থিতিতে এ ধরনের পদক্ষেপ তেমন কার্যকরী হবে না। তবে, নতুন এই সিদ্ধান্তের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক প্রভাব বৈশ্বিক রাজনীতিতে গভীরভাবে প্রতিফলিত হবে।
প্রথমত, বাইডেন প্রশাসনের এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের শক্তির সংকট মেটানো। ইউক্রেনের কিছু মিত্র, বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করছেন, এটি খুব বেশি দেরিতে এসেছে। ইউক্রেনের সেনারা যুদ্ধের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং ইতোমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হারিয়েছে।
এদিকে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে, যার মধ্যে কুরস্ক অঞ্চল অন্যতম। রাশিয়া যখন কুরস্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পুনর্দখল করেছে, তখন ইউক্রেনের সামরিক শক্তি এবং বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল আরও আগে।
এরই মধ্যে, মার্কিন প্রশাসনে এক নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার ধারণা, খুব শিগগিরই ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে বাধ্য করা হবে। এমনকি, রাশিয়া দখল করা এলাকাগুলোর ওপর ইউক্রেনকে দাবি ছাড়তেও বাধ্য হতে পারে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা মার্কিন প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান অবরোধ এবং কূটনৈতিক চাপের কথা বলছেন।
এদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ট্রাম্প নির্বাচনের আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, তার প্রশাসন ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে। যদি এমনটি ঘটে, তবে ইউক্রেনের জন্য এটি একটি বড় বিপদ হতে পারে, কারণ তাদের সামরিক সক্ষমতা অনেকটাই নির্ভরশীল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে।
ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথে রাশিয়া এখন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কুরস্কের পুনর্দখল এবং পূর্ব ইউক্রেনে আরও অগ্রসর লাভের মাধ্যমে রুশ বাহিনী তাদের দখল শক্তিশালী করেছে। এর মানে, রাশিয়া শুধু ভূখণ্ড দখলেই সফল হয়নি, বরং তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও শক্তি প্রদর্শন করছে। একদিকে, রাশিয়া নিজের সামরিক অভিযানকে ত্বরান্বিত করছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন শান্তি আলোচনা চায় এবং তাতে রাশিয়া পূর্ণ দাবিতে আগ্রহী।
বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে তাদের প্রভাব রাখতে চায়, কিন্তু রাশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল শুধু ইউক্রেন বা রাশিয়ার জন্য নয়, বরং এটি বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া যদি ইউক্রেনের অধিকাংশ ভূখণ্ড দখল করতে সক্ষম হয়, তাহলে এটি শুধু ইউক্রেন নয়, বিশ্বব্যাপী শক্তির ভারসাম্যেও পরিবর্তন আনবে।
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাশিয়ার সক্ষমতাও দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যদিও ওয়াশিংটন এবং ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে চাপ প্রয়োগ করছে, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব পদক্ষেপ কি যথেষ্ট হবে? বিশেষ করে, ট্রাম্পের প্রশাসন আসার পর ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করার সম্ভাবনা থাকলে, রাশিয়া আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসনের ইউক্রেনের জন্য নতুন কৌশল গ্রহণের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে, তবে রাশিয়ার কৌশলগত অগ্রগতি এবং মার্কিন কূটনৈতিক চাপের মধ্যেও ইউক্রেনকে এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতে পারে।